সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তখন মোবাইল ছিল না প্রেমপত্র লিখতে দিস্তা কাগজ কিনতাম

আমার বলতে দ্বীধা নেই আমি অনেক অল্প বয়সে প্রেম করেছি, আমার প্রেমের বয়স অনেক বছর সেটা শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে না, যে সময় আমার সাথের পুলাপান মাঠে ক্রিকেট খেলত আমি প্রেম করতাম মাস্তি করতাম, তাও আবার রাইভাল এরিয়াতে। আমি প্রেম করে কয়েকবার ধরা খেয়েছি বন্ধুদের কাছে, তাদের সাথে পরে মিউচুয়াল হয়ে প্রেম করতে আমার এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতাম ঘুরে তার সাথে দেখা করতে অথবা চিঠি দেবার জন্যে। ঘুরে যাওয়া যাকে বলে আর কি। এলাকার নাম শুনবেন না? ফেনী। হ্যা কার নাম মনে আসে? হাজারী? যাক কথা বাড়ালাম না।
এর মাঝে বাসায় যে ধরা খাই নাই তা কিন্তু না। যেই বয়সে আমার পাটিগনিত বীজগনিত করার কথা দিস্তায় দিস্তায় কাগজে, আমি তার বদলে চিঠি লিখতাম দিস্তায় দিস্তায় রিমে রিমে। তখন মোবাইল ছিল না প্রেমপত্র লিখতে দিস্তা কাগজ কিনতাম। ১২ টাকা দিস্তা কাগজ মনে আছে সেটা ২০০৩-২০০৪ এর কথা। সাদা দিস্তা কাগজ ১২ টাকা, নিউজ প্রিন্ট ৬টাকা। আহা। অনেক কিছু।

পাশের বাসায় ডাক্তার থাকত, উনার কাছ থেকে কাগজের/ডাক্তারি লিখার প্যাড পেতাম সেগুলা আমার প্রেমিকার কাছে চলে যেত। মূল কথা আসি। পক পক করেই যাচ্ছি। আমার লিখা চলে বেশি, মানে হাতের আঙ্গুল চলে বেশি কথা কম বলি, তাই প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গেলে হাতে মিনিমাম ১০০ পাতার চিঠি নিয়ে যেতাম। প্রেমিকা করত রাগ, আমি কেন কথা কই না? মাঝে বাংলা নোট/ সমাজ নোট/ বিজ্ঞান নোট/ বাংলা রচনা বলে চালাই দিতাম কারো কাছে ধরা পড়লে।

ব্লগার Priti Paromita এর ভালোবাসার চিঠি – ( অডিওসহ ) শুনলাম আর পড়লাম, নিজে যে কত চিঠি লিখতাম, আর পেতাম তা মনে পড়ে গেল গত পড়শু। Priti Paromita কে ধন্যবাদ সেই ২০০৩-০৪ সালের কথা মনে করিয়ে দেবার জন্যে।
একটা স্যামপল দিবো আমার দেয়া চিঠির। তার আগে বলে রাখি তার দেয়া চিঠি সব আমি হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু একটি বারের জন্যেও মন খারাপ হয়নি।

সূচনা
চিঠি লিখার আগেই হয় আমার কোন প্রিয় গানের লিরিক্স লিখে দিতাম। ও সেটা খুব লাইক করত যে তাই দিতাম। সেরকম একটা গানের লিরিক্স দেয়া হল নিচে। তখন তাহসান, আর্টসেল, ওয়ারফেইজ, অর্থহীন মানে আমরা অজ্ঞান ছিলাম।
“অসময়ের হাত ধরে।
অজানা পথ হেটে।
আজও আমি তোমার খোজে।
নিশব্দ কথা এমন গোপন করে।
তোমার স্বপ্ন খোজে ফেরে।
সব কৃত্রিমতায় মাঝে বেচে থেকেও হতাশা আমায় ছুতে পারেনা।
আমার মাঝে আজও স্বপ্ন হয়ে তুমি আছ।”

প্রারম্ভিক বক্তব্য
এরপর তার নাম ধরে ডাকতাম- তার নামটা আমার প্রিয় ছিল। জানি নাম জানার জন্যে আমাকে পরে কমেন্ট করা হবে। বাট স্যরি নাম বলব না। সে যাই হোক। তখন জান/মান/জানু/সনু/মনু/সোনা/চান্দু (কি সব আছে না আরো?) এসবের কম ব্যবহার ছিল। তাই আমি এসব বলতাম না। ইউজ টু ছিলাম না।

প্রারম্ভিক কুশল বিনিময়
কেমন আছো, কি করেছো, কি কর, কি করবা এসব জিগাইতাম। মাঝে কয়েকবার ধার করা কবিতা/ মাঝে মাঝে নিজের লিখা কবিতা লিখে দিতাম।
এর পর সারাদিনের ডায়েরি লিখা হত। সকালে এই করেছি, দুপুরে কি করলাম, বিকালে কি করলাম, রাতে এখন কি করছি, আগামীকাল কি করবো। আজ কার কার সাথে দেখা হল। মজার কিছু কথা। এই সেই করে ১০/১২ পেইজ লিখা হয়ে যেত।

মূল কথা
এবার আসল কথায় আসি, এই ভাগে এসে ভবিষ্যত নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা-স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা চলত। এই পর্বে তার আগের চিঠির উত্তরের জন্য বরাদ্দ। তার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর ক্রমানুসারে এখানে লিখা হত। এখানে আমার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা হত। আমি আমার যায়গায় রাইট এটা বুঝাই দিতাম। সারকথা দুনিয়া উল্টি যাক, তোমার আমার বিয়ে সাদি- বাচ্চা কাচ্চা হইবেই এমন আর কি। পিচ্চি হইলে কি হবে এসব ব্যাপারে উস্তাদ আছিলাম। আবেগের কথা বেশি বলতাম, বলে রাখা ভালো আমার প্রেমিকা ঝগরাইট্টা ছিল খুব। চুন থেকে পান!! খসলেই প্যান প্যান করত। এসব ভোং চোং বুঝ দিতে দিতে আমার ৪০/৫০ পেইজ শেষ।

সর্বশেষ কুশল বিনিময়
এই অংশে তার বাসার খোজ খবর নেয়া হত। তার মা/বোন আমাকে নিয়ে কিছু বলেছে কিনা, বললেও কি বলেছে তা নিয়ে একটা প্রশ্নত্তোর পর্ব থাকতো। আমার বাসায় কি কি বলেছে তাকে নিয়ে তা আলোচনা করা হত এই ভাগে। সেই দিনগুলি অনেকদিন আগেই গত হয়েছে।

উপসংহার
তোমার জন্য এতোগুলো রাত অধীর হয়ে জেগে থাকা
তোমায় ঘিরে আমার ভালো লাগা
আকাশ ভরা তারার আলোয় তোমায় দেখে দেখে
ভালবাসার পাখি মেলে মন ভোলানো পাখা…
অথবা
মুখটা তুলে আকাশটাতে দেখ আরেকবার,
তোমার সাথে আছি আমি যে চিরকাল।
জোছনার আলো যখন তোমার গায়ে পড়ে,
আমি তখন থাকি তোমারই পাশে পাশে …
মনটা খারাপ করে যখন, তুমি একা থাকো
ভেবো আমি শোনাই তোমায়, মজার কোন গল্প …

আবারো এইখানে গানের লিরিক্স/কবিতা/তাকে নিয়ে আমার আবেগ ফুটে ফেটে বাইর হইতো। অনেক কথা হত। ভালোবাসি কথাটা মনের অজান্তে কতবার বের হত আমি জানি না। মিস করছি/করেছি/করবো এসব কথা না হয় নাই বললাম। শুধু একটাবার একটাবার দেখা করতে চাই-এই চাওয়া পাওয়া নিয়ে হাজারবার অনুরোধ তোমার কাছে। কারন জানি তোমার সাথে আমার সেই প্রেমময় সময়ে দেখা করা ছিল সমাজের চোখে ধুলা দিয়ে লুকিয়ে/চুরি করে দেখা করা। সেই প্রেমের আলাদা মজা ছিল। এখন তো দেখা করা ডাইল ভাত। দেখা মানে ফাস্ট ফুডে যাও, রান চাবাও। বিল দাও। আর শপিং কর। বাকি সব বুঝে নিবার বয়স হয়েছে।

নাহ আজ আর বেশি কিছু লিখবো না। ভালোবাসা কথাটা চিঠির মাঝে বার বার লিখেছিলাম বলে আমাকে নিয়ে অনেক হেসেছো তুমি। যাও আর বলব না, যেদিন দেখা হবে সেদিন না হয় বলে দিবো। জানি ১৪ ফেব্রুয়ারী/১লা ফাল্গুন/১লা বৈশাখ (আরো অনেক অকেশান) আমাদের জন্যে না। কারন জীবনের এতগুলো বসন্ত পেরিয়ে গেলো, ভালোবাসার মানুষটার সাথে বেশি দেখা হয়নি।

জানি আজও আমার চিঠি পড়ার সময় তোমার আম্মা এসে বকা দিয়েছে। লুকিয়ে গিয়ে অন্যরুমে পড়ছো, বল তো আমি কিভাবে জানলাম? হাহা আমি না জানলে কে জানবে শুনি?
আজ আর নয়। অনেক রাত হয়েছে। তারাতারি চিঠির উত্তর দিও। প্রাইভেট পড়তে আসলে ইংলিশ “চৌধুরি হুসেইন” গ্রামার বইয়ের মাঝে চিঠি দিয়ে দিয়ো। বুঝে নিবো। কাল সকালে চিঠি পাবা, ভাবতেই ভালো লাগছে। ভালো কথা কাল প্রাইভেটে কি কালারের ড্রেস পড়ে আসবা?


রণাঙ্গন থেকে বলছি
২১/০২/২০১৪


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Baahubali: The Beginning - Plot Summary

Baahubali: The Beginning Plot Summary When Sanga and her husband, part of a tribe living around the province of Mahismathi, save a drowning infant, little do they know the background of the infant or what the future holds for him. The kid grows up to as Shivudu, a free-spirit wanting to explore the mountains and in the process learns of his roots and then realizes the whole purpose of his life and ends up confronting the mighty Bhallala Deva! It's a tale of two cousins in the Kingdom of Mahispati, India. Balla fights his way with ccousin Bahuballi for the throne. Young Sivudu grows in the tribes and travels to the distant lands above the waterfalls to fall in love with the beautiful Tamana, the tribal warrior and helps in her quest to rescue Devasena a prisoner from the claws of King Balla.In this quest he finds out that the legendary King Bahuballi is his father and Devasena the prisoner is his mother from the slave commander in chief katappa of King Balla. Ka...

আমার বউ

***বেশ কয়েকদিন আগে পোষ্টটা ফেবু সুডুতে দিয়েছিলাম। অনেক কমেন্টে ভেসে গিয়েছিলাম। সেই কথাগুলো হটাত মনে পড়লো। তাই শেয়ার করা। রুবেল ভাই এর কাছে আনুরোধ থাকবে সুডু গ্রুপ থেকে আমার পোষ্টটা খুজে লিকঙ্কটা আমাকে দিবেন পিলিজ লাগে। আমি সেই জুলাই মাসের পোস্টটা পাচ্ছিনা। গ্রুপে টাইম লাইন না থাকায় অনেক কষ্ট সেটা বুঝলাম। হাহাহা।*** কিছু পারসোনাল কথা শেয়ার করিঃ আমার বউ আমাকে যেদিন জিগায় আমার পূর্বের প্রেমের কথা আমি তাকে নিরাশ করি নাই-সব কই দিছি। এরকম সৎ সাহস কয় জনের আছে? -আমাগো যেদিন আংটি বদল হয় সেদিন আমার বউ আমাকে বলে তোমার প্রাক্তন প্রেমিকাকে জানাও নাই তোমার যে আজ আংটি বদল হচ্ছে? -আমি বলি না -ও বলে কি বলে কি বলে ফোন দাও? আমার কাছে নাম্বার ছিল না সেই কবে ডিলিট করে দিছি। মনেই করতে পারতেছিলাম না বউ যে আমার লগে প্রথম রাইতেই মজা লইতেছে বুঝতেছিলাম, যাই হোক পিড়াপিড়িতে ফোন নাম্বার জোগার করা হইলো। আমি তো ফোনই দি না জোর করে ও নিজেই ডায়াল করে বসে। ফোনটা ধরে প্রাক্তন প্রেমিকার মা। আহা-আমি আমার বউকে ফোনটা দিয়া বলি কথা কউ ওর মা ধরসে। ও নিজে হাসতে হাসতে শেষ। যাই হোক প্রাক্তন...

প্রেম VS ভালোবাসা

একটা মেয়ের শরীরের গন্ধ তোমার ভালো লাগে। এইটা হচ্ছে প্রেম। আরেকটা মেয়ে আছে , যাকে তুমি অনুভব করো। তাকে ভালো লাগার জন্য তার উপস্থিতি কিংবা শরীরের গন্ধ লাগে না। এটা হচ্ছে ভালোবাসা। কোন একটা মেয়ের সাথে রুমডেট করলে তুমি আনন্দ পাও। আরেকটা মেয়ে আছে যার কথা ভাবলেই তুমি আনন্দ পাও। প্রথমজন হচ্ছে তোমার প্রেমিকা। দ্বিতীয়জন হচ্ছে তোমার ভালোবাসার মানুষ। তোমার বন্ধু মহলে কোন একটা মেয়ে আছে যার সাথে তুমি গা ঘেঁষে বসার জন্য অস্থির থাকো। এই মেয়েটি হচ্ছে তোমার কামনার বস্তু। একই ভাবে তোমার মস্তিস্কের অন্দরমহলে একটা মেয়ে আছে যার সাথে তুমি গা ঘেঁষে বসার জন্য অস্থির না। কিন্তু তার অনুপুস্থিতির জন্য তুমি অস্থির। তার সাথে কথা বলার জন্য তুমি অস্থির। এই মেয়েটা হচ্ছে তোমার ভালোবাসার মানুষ। একটা মেয়ের নুড পিক দেখার জন্য সব সময় তুমি অপেক্ষা করো। আরেকটা মেয়ে আছে যার নুড পিক তোমার মাথাতেও আসে না । চাইলেও তুমি আনতে পারো না। প্রথমজন হচ্ছে তোমার প্রেমিকা। পরের জন হচ্ছে তোমার ভালোবাসা। একটা মেয়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে মজা নেয়ার পরেও তুমি মেয়েটার কথা ওইভাবে চিন্তা করো না। সব কিছু ফোনের ওই মজা পর্যন্তই। কিন্তু ...