সারারাত একদম
অপরিচিত জেলা উপজেলা উপর দিয়ে যাত্রা শুরু করার পর মনের মাঝে ভয়, কারন একা একা বের
হলাম সেই ২০১৩ সালের পর, তাও আবার একদম অপরিচিত রুট, ঢাকা-আরিচা-খুলনা। যার জন্যে
এই যাত্রা, সেই আমাকে সারাটা রাত পাহারা দিয়ে রাখলো। নিজে না ঘুমিয়ে আমাকে সঙ্গ
দিয়ে গেলো। হ্যা। তার জন্যই আমার খুলনা যাওয়া।
পরিচয়টা আমাদের সেই
অক্টোবর ২০১৫-তে, কথা হতে হতে অনেক কাছে চলে আসলাম, কিন্তু দেখা আর হচ্ছিলো না।
মাঝে ১ মাস আগে এটেম্প নিসিলাম যাবো, বাট তখন বাসের কোন টিকিট না পাওয়ায় আর যাওয়া
হয়নি। অনেক খারাপ লেগেছিল, বাট বুঝতে দেই নাই। এর মাঝে সে ভাবলো আমি ইচ্ছে করেই
হয়তো যাই নাই। না, ইচ্ছে ছিল আরো আগে দেখা করার। প্রায়ই আমি বলি কেন তোমার সাথে
আরো ১০/১২ বছর আগে দেখা/কথা/পরিচয় হয়নি? তারপরো আমাদের পরিচয়টা অনেক গল্পের মত।
কিভাবে যেন একদম কাছে চলে আসা, আবার সেই কাছে আসার টানে খুলনা যাওয়া। ব্যাপারটা
আসলে অনেক ভালো লাগার। ভালো লাগার কথা সবার সাথে বলতে নাই, তাই চেপে গেলাম।
কেওড়াকান্দি ফেরী যখন
পার হচ্ছি তখন রাত ৩টা। অসম্ভব ভালো লাগার কিছু মুহূর্ত ছিল। তখনো সে আমার সাথেই
(এখন তো পাশে থাকা মানে হোয়ার্টস আপ/মেসেঞ্জার)। আর মাঝ রাতে এমন এমন যায়গা দিয়ে
যাচ্ছিলাম যেখানে টেলিটকের নেট পাচ্ছিলাম না, তখন সনাতন এসএমএস-ই ভরসা।
এইভাবে যেতে যেতে
ভোরে দেখি যশোর পার হচ্ছি, সে নিজেই সারাটা রাত আমাকে পাহারা দিয়ে গেলো, একটু চোখ
লেগে আসছে ভেবে আর তাকে জানাই নাই। পরে অনেক কাছাকাছি এসে জানালাম তখন সকাল ৬.৩০ বাজে। ফোনেই মনে হল অনেক তড়িঘড়ি করে
নিজে রেডি হচ্ছে!!
প্রথম দেখা বলে কথা।
আমি নিজেও অনেক এক্সাইটেড ছিলাম।
কি হবে, কি বলবো, ও
কি বলবে, কি উত্তর দিবো, উল্টা পালটা কিছু বলবো না তো, সারারাত জার্নি করে এসে চেহারা
দেখে আমাকে চিনবে তো? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। যাক বাবা, ৭.২০-এ খুলনা সিটিতে
নামলাম।
হ্যা, তিনি আসলেন। আর
সাথে করে আমার ভাবি মাকে নিয়ে আসলেন। ভাবি মা নিয়ে আরেকদিন অনেক বড় ব্লগ লিখবো।
তাই আজ চেপে গেলাম। আর সেদিন ছিল ৬ মে। ভাবি মায়ের জন্মদিন। যার সাথে দেখা করতে
আসছি তাকে লজ্জায় কিছু না বলে ভাবির সাথেই কথা বলছিলাম। আর যার সাথে দেখা করতে
আসছি তিনিও আমার সাথে কথা বলছেন না। আমার মনে হল বোম মারলেও কথা ফুটবে না।
আহ, তিনি কথা বললেন,
মনে মনে শান্তি পেলাম, বুঝতে দেই নাই। এখানে ওখানে ঘুরা ঘুরি করে পরে বিদায় নিলাম,
এর মাঝে অনেক কাহিনী, অনেক যায়গায় অনেক কিছু দেখলাম। অনেক কথা না হলেও চোখে চোখে
কথা হয়ে গেছে অনেক। মানুষ যে বলে চোখে চোখে কথা বলা কি জিনিষ, সেদিনই বুঝলাম।
অবাক করে দিয়ে ভাবি
মা আমাকে তাদের বাসায় দাওয়াত দিলো দুপুরে খাবার। তারপর তো ইতিহাস। বিকালে বের হলাম
আমরা ২ জন, এবার যদি একটু কথা হয় আর কি।
হ্যা। কথা হল,
রিক্সা করে ঘুরাও হল। একসাথে বসে খাওয়া দাওয়াও হল। রাতে ভাবি মায়ের জন্মদিন উপলক্ষে
পিকচার প্যালেসের পাশে রুফটফ একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া হল।
বিদায় অনেক বেদনার।
সেটা আর নাই বলি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন