এই হাতটা খুব কম জনেই চিনতে পেরেছে প্রথম দেখায়। হ্যা এটা আমারই হাত। অনেক কঠোর পরিশ্রমী হাত। বলা হয়ে থাকে কঠোর পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি। কিন্তু, পরিবর্তিত সময়ে এবং কর্পোরেট সংস্কৃতিতে কেবলমাত্র কঠোর পরিশ্রমই সফলতার নিয়ামক নয়। পরিশ্রমের সাথে দরকার বুদ্ধির প্রয়োগ এবং সুদৃঢ় পরিকল্পনা।
কিন্তু আপনি নর্থ আমেরিকায় আসবেন আর কঠোর পরিশ্রম করবেন না, তা হবে না। এখানে শিক্ষা অনেক বড় একটা জিনিষ। আপনার বাংলাদেশে হাজার ডিগ্রি আছে, এই দেশে আপনার বাল্টাও গুনবে না কেউ। এখানে এসে কি কাজ করি নাই? যদি বলেন মাটি কাটসেন কিনা? সেটাও করছি। দেশে থাকতে নিজের প্লেটে খেয়ে শেষ করে কোনদিন ধুয়ে রাখি নাই, সেখানে এক ঘন্টায় পাঁচশত প্লেট ধুয়েছি। ঢাকার বাসায় আমার বাথরুম ধোয়ার জন্য বুয়াকে প্রতিমাসে এক্সট্রা টাকা দিসে আম্মু। সেই আমি এখানে এসে সিনেমা হলের একশত বাথরুম ধুয়েছি একরাতে। পেট্রোল পাম্পে কাজ করেছি, খালি হাত তেল পরিষ্কার করেছি। আর গারবেজ ক্লিনিং!! এসব তো রেগুলার কাজ! বিলিয়ন ডলার কোম্পানিতে ইনভেন্টরিতে কাজ করি এখন, বিশ তিরিশ কেজি ওয়েট লিফটিং করা এখন প্রতি মিনিটের কাজ। তারপরও এখানে একটা আশায় আছি মাস্টারসটা শেষ হলেই একটা ভালো জব পাবো এটার শিউরিটি। একদিন মনে মনে ভাববো এইসব কাজ আমি করেছি?
অনেকে হয়ত মনে করছেন, কাজ করছেন টাকা তো পাইতেছেন। হ্যা, সেটা ভালোই পাইতেছি। আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু লিভিং এক্সপেন্স হিসাব করলে এই খাটনি করে বিশ্বের এক থেকে পাঁচ নাম্বার জায়গায় থাকাটা বেশ কঠিনই। যেখানে এক রুমের বাসা ভাড়া সাতশত ডলার। সাপ্তাহে বিশ ঘণ্টা কাজ করে সাতশত ডলার কামাইতে ঘাম ছুইটা যায়। সাথে তো গ্রোসারি, মোবাইল বিল, ইন্সুরেন্স বিল, বাস টিকেট, ক্রেডিট কার্ড বিল আছেই। পড়ালেখা করছি যেখানে মাস্টারস কোর্সে পিএইচডি লিখা চায়। শুধু এইটুকুই বললাম। বাকিটা ইতিহাস। কি যে কষ্ট করতেছি পড়ালিখা নিয়ে। এত চাপ চারদিক দিয়ে। আরেকটা কথা, টিউশন ফি প্রতি তিন মাসে সাত হাজার ডলার। কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় সেটা আরেকটা ম্যানেজমেন্ট স্কিল আমার। আর যদি বাসা থেকে কিছু সাপোর্ট পেতাম তাইলে ভালো হত। কিন্তু সেটাও পাই না। এই হল আমার কুত্তা মার্কা লাইফ, ঈদের দিনেও কাম করি কিছু না খেয়েই।
সো, এই লিখার কোন মোরাল নাই। যে যার মত ভেবে নিবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন