বন্ধুত্ব নিয়ে আগেরদিন যেখান থেকে শেষ করেছিলাম আজ সেখান থেকেই আবার শুরু করি। আজকে কিছু নমুনা দিব বন্ধুত্বের। দেখবেন আপনার সাথেই অনেক কিছু মিলে যাবে। আবার ফেইসবুক ফেক বন্ধুদেরও আজকে খুঁজে পাবেন আশা করি।
আপনার আমার অনেক বন্ধু আছে, কেউ কাছের কেউ কাছে থেকেও দূরের, আবার কেউ দূরের কিন্তু এত কাছের মানুষ যা কল্পনাতেই ভাবা যায়। ফ্রেন্ড মানেই যে সারাক্ষন পাশে থাকা লাগবে কথাটা আমার কাছে দুই পয়সার দাম নাই। ফ্রেন্ড ফ্রেন্ডই। হুম তবে এটা ঠিক একটা খারাপ সময়ে ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হলে কথা হলে খারাপ লাগাটা কেটে যায়। এক সময় বন্ধু মানে বুঝতাম না। পরে খেয়াল হল বন্ধু সবাই হয় না। ১০০/১৫০ জনের মাঝে ১/২ জন থেকে যায়। আমি সেটা আগেই বলেছি। আমার এমন কিছু ফ্রেন্ড আছে যাদের সাথে আমার দেখা হয়নি আজ পর্যন্ত। দেখা হবে কিনা সেটাও জানি না।
কিন্তু এমন কোন দিন নাই যে তাদের সাথে ভাবের আদান প্রদান হয়নি। ওই যে একটা কথা বলছিলাম ফ্রেন্ড মানেই যে সারাক্ষন পাশে থাকা লাগবে সেটা কিন্তু নয়। আবার কিছু কিছু ফ্রেন্ড এর সাথে আমার আজকে পর্যন্ত ১/২ বার দেখা হয়েছে। তারপরও তো ফ্রেন্ডশিপ টিকে আছে, থাকবে।
যারা আসল ফ্রেন্ড তারা ট্রাই করেছে আমার খারাপ সময়ে পাশে থাকার, কোন বিপদে পড়লে ২ বার চিন্তা করে নাই তারা আমাকে হেল্প করার। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় আমার জন্যে তারা নিজের জানও দিয়ে দিতে ভাববে না।
আর এখন বালের ফেইসবুক, ফ্রি ফেইসবুক এসে অশিক্ষিত মানুষ এসব চালায়, ইন্টারনেট মানেই গাধার ৪ নং বাচ্চারা বুঝে ফেইসবুক, পাঠাও ফেন্ড রিকুয়েস্ট, হাবি জাবি কাব যাব। আমি লক্ষ্য করলে দেখি আমার এক হাজার ‘ফ্রেন্ডের’ যে তালিকাটি ফেইসবুকে আছে তার মধ্যে ১৫/২০ জন আছে যারা আমার বাস্তব জীবনের বন্ধু। তাহলে এই ‘ফ্রেন্ড’ তালিকাটি আসলে কী? ফেইসবুকের এই ‘ফ্রেন্ড’ সার্কল আসলে শেষ বিচারে একটি ‘কমিউনিটি’; যাদের গ্রুপ শিরোনামে খাঁচাবদ্ধ করা হয়নি। আর ফেইসবুক নিজেও বিষয়টি একেবারে ভুলে বা এড়িয়ে যায়নি। যে কারণে এখানে ‘শেয়ার’ করা ‘কনটেন্ট’ সুনির্দিষ্ট সংখ্যক ‘ফ্রেন্ডের’ সঙ্গে ‘শেয়ারের’ বিকল্পও রেখেছে। আবার কেউ আছে স্কুল/ কলেজ/ ভার্সিটি ব্যাচমেট। সো এবার তো ক্লিয়ার ব্যাচমেট আর বন্ধু কি জিনিষ?
এটা নিয়ে ২২ ঘন্টা আগে আমার এক সময়কার কলিগ তুষার সেদিন ফেইসবুকেই বলে দিল আসল কথাটা।
আজ তুমি ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করলে মুহূর্তেই সেখানে লাইকের বন্যা বয়ে যায়...প্রশংসায় ভরে যায় কমেন্ট...কত মানুষ তোমার প্রোফাইল ঘাটছে, তোমার আক্টিভিটিস খেয়াল করছে...তোমার দৃষ্টি সেখানেই...
কোথাও ঘুরতে গিয়েও তুমি নিজের মত একটু হারিয়েও যেতে পারোনা... সৌন্দর্য দেখার চেয়ে কোনপাশে কীভাবে দাঁড়ালে ছবি ভালো আসবে সেটাই মাথায় ঘোরে...খাবার ফেলে রেখে ছবির পোজ নিতে হয় আগে, পেট অচল হলে হোক ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রামে তো সচল থাকা যাবে !
খুব ভালো লাগে তোমার...ইনবক্সে যখন সবাই তোমার সাথে খাতির করতে চায়, একটু হাসিও পাই মাঝে মাঝে...নিজেকেই ভালো লাগে নিজের কাছে, না ?
ল্যাপটপটা একটু বন্ধ করে ব্যালকোণীতে এসে দাঁড়াও একবার...
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখোতো সেখানে তোমার আপনের আপন কেও আছে কিনা...
কাল তুমি যদি অসুস্থ হয়ে হসপিটালের বিছানায় শুয়ে ছবিসহ ফেসবুকে একটা পোস্ট দাও, সেখানে অনেকে বলবে “কীভাবে হলো?” “এখন কী অবস্থা?” “গেট ওয়েল সুন...” ইত্যাদি ইত্যাদি... আবেগের চোটে অনেকে সে পোস্টে লাইকও দিয়ে বসবে...
সেখানে ক’জন আছে যে ছুটে যাবে হসপিটালে সব কিছু ফেলে? ক’জন আছে যে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ এর সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বাইরে যে দুনিয়া আছে সেখানে তোমার এক ডাকে হাজির হতে পারে...
এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে যদি তোমাকে অনেক ভাবতে হয় তাহলে তুমি আসলে নিঃসঙ্গ...মায়ার ভারচুয়াল জালে আটকে পড়ে আছো তুমি...অনলাইনে হয়তো হাজার হাজার “ফ্রেন্ড” আছে, তার মাঝে একজন “বন্ধুও” নেই তোমার...
আকাশহারা পাখি যেমন, বাস্তব জীবনে তুমিও ঠিক তেমন...মোবাইল বা ল্যাপটপের ডিসপ্লে থেকে চোখ সরিয়ে তাকিয়ে দেখো একবার, কতটা ফাঁকা তোমার চারপাশ...কতটা একা তুমি...
হাজার হাজার ভার্চুয়াল বাডি নয়, পথ চলার সময় পাশে থাকার মানুষ চাই...
-Tushar Hasan
ট্রুলি স্পিকিং, আজকাল চেনা-অচেনা-অল্প চেনা মানুষদের ফেইসবুকে ‘ফ্রেন্ড’ করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাও তো ঘটছে। এর মধ্যে একটির কথা বলা যেতে পারে উদাহরণ হিসাবে। এখানে যে কেউ ইচ্ছা করলে যে কাউকে যে কোনো গ্রুপে যুক্ত করে দিতে পারেন। দেখা গেছে এই ধরনের গ্রুপে যুক্ত করার ক্ষেত্রে যাকে যুক্ত করা হচ্ছে তার মতটা আগে জেনে নেওয়ার সৌজন্য ফেইসবুক ‘ফ্রেন্ডরা’ দেখান না। এরপর সেই ব্যক্তি ওই গ্রুপ ছেড়ে গেলে তাকে তার সেই ‘ফ্রেন্ড’ গালমন্দও করেন! এছাড়া অনাকাঙ্খিত পোস্টে, ছবিতে ‘ট্যাগ’ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে যা ওই ব্যক্তির জন্য বিব্রতকর হতে পারে। এই রকম পরস্থিতির কারণে দেখা গেছে অচেনা-অল্প চেনা মানুষকে ফেইসবুক ‘ফ্রেন্ড’ হিসাবে প্রথম গ্রহণ করার পর অনেকে বাদও দিয়ে দিচ্ছেন সেই ‘ফ্রেন্ডকে’।
ফেইসবুক যে মার্ক যুকেরবার্গ বন্ধুবান্ধবদের খবর ‘শেয়ারের’ জন্য চালু করেছিলেন সেই কথা আমরা ভুলে যাইনি। তাই ফেইসবুকের এই ‘ফ্রেন্ড’ কৌশলকে একেবারে ইচ্ছাকৃতও হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু বড় পরিসরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার সময় এ নিয়ে তারা ভাবতে পারতো। দুর্ভাগ্য এই যে, ইংরেজিভাষী কেউ এ বিষয়টি নিয়ে এই দিক থেকে এখনো প্রশ্ন তুলেছে বলেও শোনা যায়নি।
সো সারমর্ম একটাই হাজার হাজার ভার্চুয়াল বাডি নয়, পথ চলার সময় পাশে থাকার মানুষ চাই...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন